আমিরুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: গোপনে নিয়োগ পরীক্ষার ভেন্যু পরিবর্তন করে মোটা অংকের টাকা ঘুষ নিয়ে সিরাজগঞ্জের তাড়াশে গোন্তা আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ টি.আর মো. আব্দুল মান্নান ও সভাপতির মো. আতিকুর রহমান বিরুদ্ধে অন্যান্য চাকরি প্রার্থীদের না জানিয়ে ৪টি পদে ৪ জনকে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এর প্রতিকার চেয়ে নিয়োগ পরীক্ষা বঞ্চিত চারজন প্রার্থী গত মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) বিকালে তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসাসহ সরকারি বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার গোন্তা আলিম মাদ্রাসায় উপাধ্যক্ষ, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, নিরাপত্তা-কর্মী এবং আয়া পদে ৪টি শূন্য পদে ২০২৩ সালের ২৭ জুন দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে ওই চার প্রার্থীসহ ভিন্ন ভিন্ন পদে যথাযথ নিয়মে আবেদন করেন। এরপর ২০২৩ সালের ২১ জুলাই উক্ত বিজ্ঞপ্তির ৩টি পদের নিয়োগ পরীক্ষার প্রবেশপত্র প্রদান করা হয়। পরে একাধিক প্রার্থী টাকা দিয়েও চাকুরি পাচ্ছেন না এবং নিয়োগ পরীক্ষাটি স্থগিতের জন্য ২০২৩ সালের ২০ জুলাই নিয়োগ পরীক্ষার পূর্বের দিন তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ দিয়েছিলেন। এদের মধ্যে নিরাপত্তা কর্মী পদে মো. জয় ইসলাম ও আয়া পদে ফাতেমা খাতুন স্বাক্ষর করেছিলেন।
তবুও ২০২৩ সালের ২১ জুলাই নির্ধারিত পরীক্ষার তারিখে একাধিক চাকুরি প্রত্যাশী প্রার্থী নিয়োগ নেওয়ার জন্য টাকা দিয়েও প্রতারণার শিকার হয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে একজন কীটনাশক প্রাণ করেন এবং অপর এক প্রার্থী পরীক্ষা কক্ষেই রশি দিয়ে গলায় ফাঁস নেওয়ার চেষ্টা করেন। বিষয়টি জটিল ও কঠিনে পরিণত হওয়ায় অত্র নিয়োগের ডিজির প্রতিনিধি মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মাদ আবু নঈম নিয়োগ স্থগিত করে চলে যান।
পরে পরীক্ষার ভেন্যু পরিবর্তনের জন্য ২০২৩ সালের ৩ ডিসেম্বর তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসাকে মাধ্যম করে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক লিখিত আবেদন করেন ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ টি.আর আব্দুল মান্নান। যা ২০২৩ সালের ৪ ডিসেম্বর ওই লিখিত পত্রে সুপারিশ করেন তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
এরপর অন্য কোন প্রার্থীদের প্রবেশপত্র না দিয়েই গোপনে ওই ৪ পদে ৪ জনকে নিয়োগ সম্পন্ন করে বিল প্রদানের জন্য মাদ্রাসা অধিদপ্তরে প্রেরণ করা করেছেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ টি.আর আব্দুল মান্নান ও সভাপতির মো. আতিকুর রহমান।
আয়া পদে ফাতেমা খাতুন বলেন, নিয়োগ পরীক্ষার পূর্বেই ২০২০ সালে অধ্যক্ষ টি.আর মো. আব্দুল মান্নান আমার কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা নিয়েছে তাঁর নিজ বাড়িতে। নিয়োগের জন্য টাকা দেওয়ায় আমার স্বামী আমাকে তালাক দিয়েছেন। প্রমাণ হিসেবে একটি ভিডিও আছে আমার কাছে।
নিরাপত্তা কর্মী পদে আবেদন কারী জয় ইসলাম বলেন, ২০২৩ সালের ২১ জুলাই আমরা পরীক্ষার প্রবেশ পত্র পাই। কিন্তু পরীক্ষা দিতে এসে জানতে পারি পূর্বেই আমার পদের প্রার্থীর কাছে থেকে মোটা অংকের ঘুষ নিয়েছে। যা নিয়ে মাদ্রাসা চত্ত¡রে হট্টগোলের সৃষ্টি হলে ডিজির প্রতিনিধি বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মাদ আবু নঈম স্যার নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করে চলে যান। এরপর আমাকে আর কোন প্রকার প্রবেশপত্র দেওয়া হয়নি। অথচ গোপনে সুপার ও সভাপতির পছন্দের চার প্রার্থীকে ভুতুরে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার পদে আবেদন কারী হাদিউল ইসলাম ও আরমান সরকার জানান, আমাদেরকে কোন প্রবেশপত্র দেওয়া হয়নি। কবে নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছে তাও জানি না। অথচ চারটি পদে নিয়োগ পাওয়াদের বিল বেতন করতে সংশ্লিট দফতর গুলোতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে। এতে আমরা নিয়োগের বিষয়টি জানতে পেরেছি। আমরা এ ধরনের জালিয়াতি নিয়োগ বাতিলসহ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নিয়োগ দানের জন্য দাবী জানাচ্ছি।
অবশ্য, ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে গোন্তা আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ টি.আর মো. আব্দুল মান্নান বলেন, নিয়োগ বোর্ড ও মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতির নির্দেশে ওই চার পদের নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়েছে।
আর যথার্থ নিয়মেই ওই ৪টি পদে নিয়োগ সম্পন্ন করেছি বলে দাবী করেন বোর্ড সভাপতি ও মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. আতিকুর রহমান।
এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মোস্তাফিজুর রহমান, লিখিত অভিযোগটি পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।